অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে দিল্লি যাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির মাঝে কাল বৃহস্পতিবার তিনদিনের সফরে নয়াদিল্লি যাছেন পররাষ্ট্রসচিব।
সেখানে ফরেন অফিস কনসালটেশনের (এফওসি) আওতায় ২৪ নভেম্বর ঢাকা-নয়াদিল্লি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে এর নেতৃত্ব দিবেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা। ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের আমন্ত্রণেই দিল্লি সফরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব।
জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে পররাষ্ট্রসচিবের ভারত সময় নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা। সীমান্ত হত্যা, তিস্তা চুক্তিসহ ঢাকা-নয়াদিল্লির অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে কোনো অগ্রগতি হবে কি না এনিয়েও আছে নানামুখী প্রশ্ন। তবে এসকল প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায়নি পররাষ্ট্রসচিবের কাছ থেকে।
বুধবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসকল আলোচনা নাকচ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা চাইল জল্পনা-কল্পনা করতে পারেন। প্রধানত গত ১০ মাসে প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে পর্যালোচনা এবং নির্বাচনের পরে বা আগামী বছরে কোন কোন জায়গায় আরও বেশি কাজ করতে পারি, সে জায়গাগুলো ঠিক করতে চাচ্ছি যাতে সময় নষ্ট না হয়।’
রাজনৈতিক কোনো বার্তা থাকবে কি না এর উত্তরে বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে সেখানে যাচ্ছি না।’
নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: ভোটের আগে কেন এই দিল্লি সফর এই প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘নির্বাচন বা রাজনৈতিক কোনো হিডেন (গোপন) এজেন্ডা নিয়ে যাচ্ছি না। প্রধানমন্ত্রীর কোনো বার্তা নিয়ে যাচ্ছি না। তবে যেহেতু নির্বাচন সামনে, তাদের পক্ষ থেকে কিছু জানার থাকলে সেটা অবহিত করতে পারব’।
চলতি বছরে দুইবার এফওসি হওয়ার কারণ কি জানতে চাইলে তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘একাধিকবার এফওসি হবে না এমন কোথাও বলা নেই। বছরের প্রথমে হয়েছে, এখন আবার বছরের শেষে হচ্ছে। এর মধ্যে প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে, যা পর্যালোচনা করতে যেতেই পারি’।
বাংলাদেশ- ভারত দ্বিপাক্ষিক আলোচিত বিষয়: পররাষ্ট্রসচিবের নয়াদিল্লি সফরের আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আসন্ন বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এটা একটা রুটিন মেকানিজম। সেখানে দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। এই বৈঠকে অগ্রাধিকার যেসব বিষয় আছে- রাজনীতি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, কানেক্টিভিটি, জ্বালানি- বিদ্যুৎ ও অভিন্ন নদী সংক্রান্ত, আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়, উন্নয়ন সহায়তা ও বিভিন্ন প্রকল্প এবং কনস্যুলার সংক্রান্ত সহযোগিতার বিষয় থাকবে। এর বাইরেও আলোচনা হতে পারে’।
পররাষ্ট্র সচিবের মতে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কানেক্টিভিটির গুরুত্ব বাড়ছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কানেক্টিভিটি সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। এখন কিন্তু অনেকটা শেইপের মধ্যে এসে গেছে। নর্থ ইন্ডিয়া, মাতারবাড়ি আছে জাপানের সম্পৃক্ততার। ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের আগ্রহ আছে, আমেরিকার আছে। আমরা কি কি ধরনের প্রজেক্টস নিতে পারি সেখানে। আমরা আমাদের আউটলুকস বলেছি, সেটা নিয়েও আলোচনা করার সুযোগ আছে।
বিশ্ব দাতা সংস্থা ও রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান: গ্লোবাল স্বার্থ সংরক্ষণে কীভাবে আমরা (ঢাকা-নয়াদিল্লি) কাজ করতে পারি সেক্ষেত্রেও রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে কীভাবে আমরা একে অপরের সহযোগিতা বাড়াতে পারি, সে বিষয়গুলো নিয়েও হবে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কি ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে, সেগুলো ঠিক করব। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানেও জোর দেয়া হবে। এর এসকল ক্ষেত্রে আমরা সবসময় তাদের (ভারত) সহযোগিতা চেয়ে এসেছি।
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় নয়াদিল্লিতে অবস্থিত প্রায় ৯০টি দেশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ঢাকার অগ্রগতি ও উন্নয়ন সম্পর্কে অবহিত করা হবে। একইসাথে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে ঢাকার যে কমিটমেন্ট (প্রতিশ্রুতি) এই বিষয়েও মিশনগুলোতে বার্তা দেয়া হবে বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব।
Leave a Reply